গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে গণহত্যা চালান, তার মামলার খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।

বুধবার (২ এপ্রিল) বিকেলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অসংখ্য প্রমাণ ও উপাত্ত পাওয়া গেছে। তিনি কখনো সরাসরি, কখনো টেলিফোনে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন এবং তা নিশ্চিতও করেন। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। আইনের পরিভাষায় এটি ‘সুপেরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’।

চিফ প্রসিকিউটর জানান, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণহত্যা চালানোর অজস্র প্রমাণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বর্তমানে এটি প্রসিকিউশনের হাতে রয়েছে এবং শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হবে।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনসহ বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩০০টির বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা, ১৫ বছরের গুম এবং ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে পরিচালিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে।

এ পর্যন্ত ২৩টি মামলায় ১৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ২০ এপ্রিলের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর আগে ও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা ও গুলিতে প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হন। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে এবং ভুক্তভোগী পরিবারের দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।